রামুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী বিরুদ্ধে রাজস্ব আত্মসাৎ, গ্রাহক হয়রানিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার, ৫ জানুয়ারি রামু উপজেলা পরিষদের সামনে রামু-কক্সবাজার সড়কে আয়োজিত এ সমাবেশে অসংখ্য ভুক্তভোগী প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরীর অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। রামু ও পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা হয়রানির শিকার শত শত বিদ্যুৎ গ্রাহক এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে রামুর গর্জনিয়া বাজারের বিদ্যুৎ গ্রাহক ফরিদুল আলম বলেন- তিনি রামু বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া বাজারের নিয়মিত গ্রাহক (নং- ২৭৪৫১২৭৭)। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারনে তার বিদ্যুৎ সংযোগটি দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন ছিল। আর্থিক অভাবের কারনে তিনি কিস্তি কিস্তি করে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে। বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া টাকার পরিমাণ কমে আসলে ২০২৩ সালের ১ জলাই তিনি বিদ্যুৎ সংযোগ পুণরায় চালু করেন। মিটার চালুর ১ সপ্তাহ পর রামু বিদ্যুৎ অফিসের একটি দল বিদ্যুৎ সংযোগটি মিটারের রিডিং দেখা যায়না বলে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরদিন তিনি আবাসিক প্রকৌশলী গৌতুম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করিলে, তিনি আমাকে এতদিন মিটার ব্যবহার কর নাই কেন? নিশ্চয় বিদ্যুৎ চুরি করেছ বলে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন। কিন্তু তিনি আর্থিকভাবে সংকটাপন্ন বলে জানালে আবাসিক প্রকৌশলী তাকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করে দেয়। তিনি নিরুপায় হয়ে ভিটে বাড়ি বিক্রি করে জমি বিক্রি করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা গৌতম চৌধুরীর কাছে দেন। কিন্তু এ জরিমানার কোন জমা রশিদ প্রদান করেননি। পরে তিনি জমা রশিদ চাইলে তার কাছ থেকে আরও ৩০ হাজার টাকা নিয়ে একটি প্রি-পেইড মিটার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রতিস্থাপন করেন। মিটার নেয়ার পর ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা পরিশোধের কপি চাইলে প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী তাকে জানান- রশিদের কি প্রয়োজন, মামলা থেকে বেঁচে গেছো এটাই বড় কথা। তাঁর ধারনা তার কাছ থেকে নেয়া মোটা অংকের জরিমানার অর্থ প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন।
সমাবেশে রামুর গর্জনিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহক নুরুল হাকিম, আনোয়ার হোসেন, জয়নাব বেগম ও আনোয়ারা বেগম বলেন- বিগত ২০২১ ও ২০২২ সালে তাদের সরকারি বিদ্যুৎ বিলের কপি না দেয়ায় তার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারেননি। এ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেও তারা কোন সুফল পাননি। এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর ও ৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ অফিসের একটি দল এসব গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তারা সংযোগ পূনঃস্থাপনের আবেদন করলে আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী পূর্ববর্তী ডিজিটাল মিটারের বিল উল্লেখ করে নুরুল হাকিমের কাছ থেকে ৭৬ হাজার টাকা, আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা, আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং জয়নাব বেগমের কাছে থকে ১৫ হাজার টাকা নগদ গ্রহন করেন। কিন্তু জরিমানার এসব অর্থ পরিশোধের ১ বছর পার হলেও অদ্যাবধি কোন রশিদ তাদের দেয়া হয়নি। এছাড়া তাদের সংযোগ পুনঃস্থাপনের সময়ও তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন গৌতম চৌধুরী।
রাজারকুল ইউনিয়নের টমটম গ্যারেজ মালিক মহি উদ্দিন জানান- তিনি টমটম গ্যারেজ করার সময় মিটার চেয়ে আবেদন জানান। মিটারের সরকারি সকল চার্জসহ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা হলেও আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী তার কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরে ওই মিটার পুড়ে গেলে পুনঃরায় সংযোগের জন্য আবেদন করেন। এসময়ও ২৩ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে তার কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। গৌতম চৌধুরীর কার্যালয়ে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করলে এ দুর্নীতির চিত্র ধরা পড়বে বলেও মন্তব্য করে মহি উদ্দিন। মানববন্ধনে ডিজিটাল মিটারের পরিবর্তে ঘরে ঘরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের অধিক টাকা নেয়া হয়েছে বলে মানববন্ধনে অসংখ্য গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও কারণে-অকারণে গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ইচ্ছেমতো জরিমানা আদায় এবং গ্রাহকদের আদায়কৃত জরিমানার রশিদ না দেয়াসহ আরও নানান অনিয়মের অভিযোগ এনে এসব অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে দুর্নীতিবাজ আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অন্যত্র অপসারণের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশ নেয়া ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
এদিকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উত্থাপিত গ্রাহকদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রামু বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী এসব অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়গুলো কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন- ‘এখানে কাজের চাপ বেশী, জনবল কম। তাছাড়া এখান থেকে আমি এমনিতেই চলে যেতে চাই, যা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও বলেছি।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির মজুমদার জানিয়েছেন- আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অতীতেও বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছিলাম। সকল অভিযোগ তদন্ত করে এ ব্যাপারে শীঘ্্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গনি জানিয়েছেন- গৌতম চৌধুরীর অনিয়ম নিয়ে আমার কাছে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। আরও কোন ভুক্তভোগী গ্রাহক অভিযোগ করলে সব বিষয় সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
উল্লেখ্য আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রামুতে যোগদানের পর থেকে অত্যন্ত দাফটের সাথে রমরমা ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার ও শাস্তি দাবি করে ইতিপূর্বে রামুতে আরও একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিলো। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দুর্নীতির তদন্ত দূরের কথা, উল্টো তিনি রামুতে বহাল তবিয়তে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন